ব্লগ

"অপারেশন সিঁদুর": ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ

Written by Mrinal Haque


পেহেলগামের নির্মম সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতের “অপারেশন সিঁদুর” শুরু হয়েছিল একটি সীমিত সামরিক কার্যক্রম হিসেবে। তবে এই প্রতিশোধমূলক হামলার আড়ালে লুকিয়ে ছিল গভীর কৌশলগত ও রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ। যদিও সাম্প্রতিক খবরে জানা যাচ্ছে, দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে, কিন্তু এই সংঘাতের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

**রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট:**
ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি এই সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। মণিপুরের জাতিগত সংঘাত, পাঞ্জাবের কৃষক আন্দোলন, পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্র-রাজ্য দ্বন্দ্ব এবং আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের চাপ – এই সবকিছু মিলে সরকারের জন্য একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। ঐতিহাসিকভাবে দেখা যায়, অভ্যন্তরীণ সংকট কাটাতে বহিঃশত্রুর ধারণা কাজে লাগানো হয়। “অপারেশন সিঁদুর” কি সেই কৌশলের অংশ ছিল?

**অর্থনৈতিক প্রভাব:**
যুদ্ধের অর্থনৈতিক প্রভাব ভারতের জন্য গুরুতর হতে পারত। উচ্চ বেকারত্ব, কৃষি খাতের সংকট, শিল্প উৎপাদনে মন্দা এবং রাজস্ব ঘাটতির মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ ভারতের অর্থনীতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারত। বিশেষ করে যখন দেশটি জি২০ নেতৃত্ব, ব্রিকস ও কোয়াডের সদস্যপদ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উল্লেখযোগ্য অবস্থান ধরে রেখেছে।

**পাকিস্তানের সামরিক শক্তি:**
অনেকে পাকিস্তানকে দুর্বল ভেবে ভুল করছেন। যদিও দেশটি অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে, কিন্তু তাদের সামরিক শক্তি উল্লেখযোগ্য। চীন ও তুরস্কের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা, আধুনিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি, এবং ভৌগোলিক সুবিধা পাকিস্তানকে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ করে তোলে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও এই সংঘাতকে আরও জটিল করে তুলতে পারত।

**আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:**
ভারতের বর্তমান কূটনৈতিক অবস্থান খুবই স্পর্শকাতর। চীনের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনা, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের জটিলতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক বিরোধ মিলিয়ে আন্তর্জাতিক সমর্থন পাওয়া সহজ হতো না। দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও সম্পর্কের টানাপোড়েন এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারত।

**বিকল্প পথ:**
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভারতের উচিত ছিল কূটনৈতিক চাপ বাড়ানো। পেহেলগাম হামলার নিন্দা আন্তর্জাতিকভাবে সর্বসম্মত ছিল। এই সমর্থন কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানকে জঙ্গি নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে বাধ্য করা যেত। জাতিসংঘের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করাও একটি কার্যকরী পদক্ষেপ হতে পারত।

**কাশ্মীর ইস্যু:**
এই সংঘাত কাশ্মীরের দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত ইস্যুকে আবারও সামনে এনেছে। ২০১৯ সালে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর থেকে অঞ্চলটির পরিস্থিতি অস্থির রয়েছে। শুধু সামরিক সমাধান নয়, রাজনৈতিক সংলাপ ও জনসমর্থন আদায়ের কৌশলও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

**উপসংহার:**
যুদ্ধবিরতি বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি ইতিবাচক সংবাদ। তবে দীর্ঘমেয়াদী শান্তির জন্য দুই দেশকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। ভারতের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো অভ্যন্তরীণ সংকট সমাধানে মনোযোগ দেওয়া এবং কাশ্মীর ইস্যুতে একটি স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করা। কারণ, প্রকৃত বিজয় শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে অর্জিত হয় না – তা অর্জিত হয় জনগণের মনোজগতে।


About the author

Spencer Tierney is a writer and NerdWallet's authority on certificates of deposit. His work has been featured by USA Today and the Los Angeles Times. See full bio