আর্থিক খাত ফিচার

নয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ আমানত বৃদ্ধি ব্যাংক খাতে

Written by Mrinal Haque


কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গ্রাহকদের আস্থা ফিরে পাওয়া এবং রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স প্রবাহের ফলে গত মার্চ মাসে দেশের ব্যাংকিং খাতে নয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে।

মার্চ মাস শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮.১৮ লাখ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮.৫১% বেশি। ২০২৪ সালের মার্চ শেষে ব্যাংকিং খাতে আমানতের পরিমাণ ছিল ১৬.৭৫ লাখ কোটি টাকা।

২০২৪ সালের জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে আমানত বৃদ্ধির হার ছিল ৯.২৫%। তবে এরপর থেকেই আমানত বৃদ্ধির হার কমতে শুরু করে। গত আগস্ট মাসে আমানত বৃদ্ধির হার ছিল গত ১৮ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন—৭.০২%। এ বছরের জানুয়ারি থেকে আমানত বৃদ্ধির হার কিছুটা বাড়তে দেখা যায়। এর ধারাবাহিকতায় মার্চ মাসে নয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ আমানত বৃদ্ধি রেকর্ড করা হয়।

বিভিন্ন ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকিং খাতে ঋণ জালিয়াতির ঘটনা এবং দুর্বল ব্যাংকগুলোর আমানতকারীদের টাকা তোলার সংকটের কারণে গ্রাহকদের আস্থা কমে গিয়েছিল। গত আগস্টে দায়িত্ব নেওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ১৩টি ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন, টাকা ছাপিয়ে তরলতা সহায়তা প্রদান এবং বেনামী ঋণ বিতরণ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ উল্লেখযোগ্য।

যদিও এসব দুর্বল ব্যাংকের সার্বিক অবস্থার বিশেষ উন্নতি হয়নি, তবুও এসব পদক্ষেপ পরিস্থিতির আরও অবনতি রোধ করেছে। গভর্নর ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ এবং ইউসিবি ব্যাংকের উন্নত পারফরম্যান্সের কথাও মিডিয়াকে জানিয়েছেন। একই সাথে শক্তিশালী ব্যাংকগুলোর প্রতি গ্রাহকদের আস্থা বেড়ে যাওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানে আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও অনেক ব্যাংক এখন গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে আমানতে ১৪% পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে।

বৃদ্ধির প্রবণতা পরিবর্তন

ব্যাংকাররা মন্তব্য করেছেন যে, মার্চ মাসে আমানত বৃদ্ধি পেলেও এখনই বৃদ্ধির প্রবণতা পরিবর্তন হয়েছে বলে মন্তব্য করা সম্ভব নয়।

ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সেলিম আরএফ হুসেইন আমানত বৃদ্ধিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এক বা দুই মাসের বৃদ্ধির তথ্য দেখে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব বোঝা সম্ভব নয়। “আমানত টেকসই বৃদ্ধির পথে আছে কিনা তা নিশ্চিত হতে আমাদের আরও কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে।”

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমানও একই মত দিয়েছেন যে, আমানত বৃদ্ধির প্রবণতা বোঝার জন্য আরও সময় প্রয়োজন।

তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, বিভিন্ন কারণে এক মাসে আমানত বৃদ্ধি পেতে পারে। “অনেক ব্যাংক উচ্চ সুদ হার দিচ্ছে, যা একটি কারণ হতে পারে। এছাড়া মার্চ মাসে রেমিট্যান্স বৃদ্ধিও আমানত বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।”

পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ আলী মার্চ মাসে আমানত বৃদ্ধির পেছনে চারটি মূল কারণ চিহ্নিত করেছেন। প্রথমত, তিনি বলেন যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদের হার বাড়ানোর পর ব্যাংকগুলো আমানতে উচ্চ সুদ দিচ্ছে, যা গ্রাহকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

দ্বিতীয়ত, উচ্চ ঋণ-আমানত অনুপাত (ADR) সম্পন্ন ব্যাংকগুলো আমানত সংগ্রহে বিশেষ প্রচারণা চালিয়েছে, যা কিছু তহবিল আকর্ষণে সফল হয়েছে।

তৃতীয়ত, বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠনসহ ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপ ধীরে ধীরে গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে এনেছে।

চতুর্থত, মার্চ মাসে রেকর্ড ৩.২৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। রেমিট্যান্স ব্যাংকিং খাতে প্রবেশ করলে অর্থ প্রাপকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়। গ্রাহকরা সাধারণত পুরো অর্থ একবারে তুলে নেন না, ফলে আমানত বৃদ্ধি পায়। এটি সাম্প্রতিক আমানত বৃদ্ধির একটি উল্লেখযোগ্য কারণ।

ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থ বৃদ্ধি পেয়েছে ২৫,০০০ কোটি টাকা

যদিও সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থের পরিমাণ কমার প্রবণতা ছিল, মার্চ মাসে তা আবার বেড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ শেষে জনগণের হাতে নগদ অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২.৯৬ লাখ কোটি টাকা, যা ফেব্রুয়ারি মাস শেষে ২.৭১ লাখ কোটি টাকা থেকে ২৫,০০০ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের মার্চের তুলনায় এটি ১৩.৪৯% বৃদ্ধি, এবং গত এক বছরে ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থের পরিমাণ প্রায় ৩৫,০০০ কোটি টাকা বেড়েছে।

অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন যে, ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থ বৃদ্ধি অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, কারণ এটি অর্থের গতি কমিয়ে দেয় এবং শেষ পর্যন্ত অর্থ সৃষ্টি হ্রাস করে। এই নগদ অর্থের একটি বড় অংশ যদি ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ফিরে আসে, তবে ব্যাংকগুলোর তরলতা অবস্থার উন্নতি হবে এবং ঋণ প্রদানের সক্ষমতা বাড়বে, যা দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

মোহাম্মদ আলীর মতে, মার্চ মাসে ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থ বৃদ্ধির প্রধান কারণ ছিল ঈদ উৎসব। এই সময়ে মানুষ কেনাকাটার জন্য বেশি নগদ অর্থ হাতে রাখে।

একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি ব্যাংকের ডেপুটি ব্যবস্থাপনা পরিচালক উল্লেখ করেন যে, যদিও বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতির হার কমছে, তবুও এটি উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। ফলে মানুষের ব্যয় আগের তুলনায় বেড়েছে। ঈদ-সংক্রান্ত ব্যয় ছাড়াও পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে মানুষ বেশি নগদ অর্থ হাতে রাখতে বাধ্য হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থের পরিমাণ ছিল ২.৪৬ লাখ কোটি টাকা। এরপর থেকে মুদ্রাস্ফীতির চাপে প্রতি মাসে এটি বাড়তে থাকে এবং গত বছরের জুলাই মাস শেষে সর্বোচ্চ ২.৯২ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছায়।


About the author

Spencer Tierney is a writer and NerdWallet's authority on certificates of deposit. His work has been featured by USA Today and the Los Angeles Times. See full bio